
নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 52 বার পঠিত
দেশের বীমা শিল্পে আস্থা ফেরাতে আইনগত সংস্কার, জনবল বৃদ্ধি ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ব্যাপক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম।
বুধবার ‘বীমা খাতের সংস্কার ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত তুলে ধরেন।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বীমার প্রতি গ্রাহক ও জনগণের আস্থার সংকট এই শিল্পের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। একমাত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলেই এ খাতের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে; তেমনি উন্নয়নও ঘটবে। আর এই সুশাসন নিশ্চিত করতে আইডিআরএ’র ব্যাপক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। বীমা খাতেও সংস্কার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আইডিআরএ শুধু নামেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা; কাজে নেই। আমাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবার যতটুকু রয়েছে ততটুকুও প্রয়োগ করতে পারি না। এর কারণ হিসেবে তিনি বীমা আইনের ত্রুটির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের বীমা আইন অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ একটি আইন। এ আইনে মূলত আইডিআরএ’কে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। আইনটি আসলে বীমাকারীদের পক্ষে কাজ করে।
দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বলেন, বীমা আইনে আইডিআরএ’কে যতটুকু ক্ষমতা দেয়া আছে; ততটুকুও আসলে প্রয়োগ করা যায় না। অনিয়ম দুর্নীতির কারণে কোনো কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হলে, পর্ষদ ভেঙে দেয়া হলে পরের দিন আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। আবার তারাই পুনর্বহাল হয়ে যায়। আইডিআরএ পর্ষদ বরখাস্ত করতে পারে, কিন্তু বাতিল করার ক্ষমতা নেই। বোর্ড অনুমোদনের ক্ষমতাও নেই। আইনে প্রশাসক কী করবেন তাও সুনির্ধারিত নেই।
গ্রাহকদের বকেয়া বীমা দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডারের সম্পদ বিক্রি করে দাবি পরিশোধের ক্ষমতা আইডিআরএ’র নেই। আমরা তদন্তের পর মামলা করতে পারি। এরইমধ্যে কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু মামলা চলমানও আছে।
কয়েকটি কোম্পানিকে ঘিরে সৃষ্ট সংকটের উদাহরণ টেনে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দিতে হবে। ক্ষমতা প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নইলে ক্ষমতা দিয়েও লাভ নেই।
ড. এম আসলাম আলম বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে বীমা খাতে যে অনাচার হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি তার পুঞ্জিভূত ফসল।
এই সময়ে লুটতরাজের জন্য অনেক বীমা কোম্পানির লাইসেন্স নেয়া হয়েছে, ঘটেছেও তাই।
সেমিনারে বক্তাদের বিভিন্ন খাতে বীমা বাধ্যতামূলক করে দেয়ার প্রস্তাবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, এই অবস্থায় এটি করলে শুধু বীমা কোম্পানির মালিকদেরই পকেট ভারী হবে। অর্থনীতি বা জনগণের কোনো লাভ হবে না। যে কারণে জনকল্যাণমুখী কোনো সরকার এটি করবে না। সুতরাং সবার আগে বীমার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে হবে। অনিষ্পত্তিকৃত বীমা দাবি পরিশোধ না করলে এই আস্থা বাড়বে না। সুশাসন নিশ্চিত করতে আস্থা বাড়াতে হবে।
ইতিমধ্যেই বীমা আইন ও জাতীয় বীমা নীতি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামত চাওয়া হবে বলে জানান আইডিআরএ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমরা এ খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, যেকোনও পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত নিতে হলে সুনির্দিষ্ট তথ্যের প্রয়োজন। কিন্তু বীমা কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে তথ্য দিতে চায় না। যেসব তথ্য দেয় তা ফেব্রিকেটেড (জাল-জালিয়াত) কিনা তাও নিশ্চিত নয়। ডিজিটালাইজেশন হলে ৮৫ শতাংশ অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা পদক্ষেপ নেই কিন্তু সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, আইআইএমএস যেটা ইউএমপি নামে পরিচিত ছিল সেটা ১০টি সার্ভিস দিচ্ছে। বীমা কোম্পানিগুলো মনিটরিং করতে এসব তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আইআইএমএস-এ পূর্ণ তথ্য দিলে আইডিআরএ কাজ করতে পারবে। ড. এম আসলাম আলম বলেন, ডিজিটালাইজেশন ছাড়াও যদি যথাসংখ্যক জনবল থাকতো তাহলেও হতো। কিন্তু আইডিআরএকে স্বল্প সংখ্যক জনবল ও স্বল্প টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
আইডিআরএ’র সহযোগিতায় ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের উদ্যোগে কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। জীবন বীমা খাত নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রগতি লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম এবং নন-লাইফ খাত নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেনা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিক শামীম।
পরে সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধের উপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা।
সেমিনারে নতুন বীমা পলিসি বাজারজাত করতে প্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাকচ্যুয়ারিদের সেবা গ্রহণের আইনি পথ খুলে দিতে আইডিআরএ’র প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। এছাড়া বাধ্যতামূলক বীমার পরিধি বৃদ্ধি, দ্রুত দাবি নিষ্পত্তির সুবিধার্থে ঝুঁকি মূল্যায়নে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেন তারা।
দাবি নিষ্পত্তিকে বীমা খাতের প্রধান অগ্রাধিকারের জায়গায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের আরো কঠোর হতে হবে।
এ সময় বীমা দাবি নিষ্পত্তি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের স্বেচ্ছাচারিতার কথা উল্লেখ করে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতের কয়েকজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তাদের কাছে বীমা দাবি চাইলে বলে তিন বছর পরে আসেন। সাত বছর পর ফাইল উপস্থাপন করা হয়। ২০১৭ সালের বীমা দাবির ফাইল কেবল নিষ্পত্তির জন্য টেবিলে তোলা হয়েছে। আমরা এফডিআরএ ভেঙে বীমা দাবি দিয়েছি। এখন আবার তারা দাবি সমন্বয় না করে রিইন্স্যুরেন্স ট্রিটির প্রিমিয়াম চাচ্ছে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের এ ধরনের কর্মকান্ডে আইডিআরএ’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন মুখ্য নির্বাহীরা।
এসময় সাধারণ বীমার একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে দেশে প্রাইভেট রিইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গঠন অথবা স্থানীয় কোম্পানিগুলোতে রিইন্স্যুরেন্স পুল গঠনের আহ্বান জানান তারা।
Posted ৯:৩৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy